বিজেপি নেতাদের আরও বেশি করে ‘জয় বাংলা’ বলার পরামর্শ দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দেখে জয় বাংলা শ্লোগান দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা উত্তরের ভিডিও এখন ভাইরাল। বাংলার একজন বিরোধী দলনেতা হয়েও শুভেন্দুর ‘জয় বাংলা’র বদলে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার নিদান নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার মুখে নন্দীগ্রামের বিধায়ক। আর সেই আবহেই বিজেপির নেতাদের আরও বেশি করে ‘জয় বাংলা’ বলার টোটকা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সাংসদ, বিধায়ক, জেলাস্তরের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তিনি। বিহারের পর চলতি মাসেই এসআইআর শুরু হতে পারে অন্যান্য রাজ্যগুলিতে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিটি রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই বাংলার একাধিক নাগরিককে এনআরসির নোটিস পাঠাচ্ছে বিজেপি শাসিত অসম সরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইসব ইস্যুতে আরও বেশি করে বিজেপি বিরোধিতায় শান দেওয়ার জন্য এই সাংগঠনিক বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানেই তাঁর নির্দেশ, “বিজেপি নেতাদের দেখলে জয় বাংলা বলুন।” এর আগেও একাধিকবার দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল ভুগতে হয়েছে তৃণমূলকে। ইতিমধ্যেই দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ূন কবীর, রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং সর্বশেষ শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ২৬-এ যাতে কোনভাবেই এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল ভুগতে না হয়, তার জন্যই দলে ঐক্য বজায় রাখার দিকে জোর দিলেন অভিষেক। সর্বস্তরের নেতাদের সতর্ক করে বললেন, “আমি-তুমির রাজনীতি চলবে না।” রাজ্যের ৮০ হাজার বুথে ছোট ছোট সভা করে মানুষের কাছে পৌঁছনোর বার্তা দিলেন তিনি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলার পাওনা টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। তারপরও রাজ্য সরকার নিজেদের টাকায় মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ করছে। সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এসআইআর ইস্যু-সহ বাংলা ভাষার উপর বিজেপির আক্রমণের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠতে হবে। সেই নির্দেশও অভিষেক এদিন দিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল, সোমবারই কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক, নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। উত্তরের জেলাগুলিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে হবে। সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। আজ, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ দলের সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর ও অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। প্রায় নয় হাজার দলীয় নেতৃত্ব এদিন এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন। এসআইআর নিয়ে দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বিজেপি নেতারা বলছে ১ কোটি নাম বাদ যাবে। আমি বলছি ১ জনের বাদ দিয়ে দেখাক। তারপর কত বড় বিজেপি নেতা আছে, বাংলায় পা দিয়ে দেখাক। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।” এদিন এনআরসি ইস্যুতেও সরব হয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “কে নাগরিক, সেটা ঠিক করবে বিজেপি? উত্তরবঙ্গের লোকেরা দেখুন বিজেপি কী করছে, আপনারা তো সাপোর্ট করেছেন। আমাদের সরকার দিচ্ছে, বিজেপি কেড়ে নিচ্ছে। অঞ্চল সভাপতিরা ৩০-৪০ জন করে লোক নিয়ে সভা করুন। মানুষকে বোঝান। বুথে বুথে সভা করুন। বিজেপিকে জবাব দিতে হবে।” ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, “আমরা তো পেরেছি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ১৮ থেকে ১২ তে নামাতে। তাহলে এবার বিধানসভায় কেন ৭৭ থেকে ৪০-এর নিচে নামিয়ে আনতে পারব না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল ইঞ্জিন সরকার অনেক শক্তিশালী।” সে কথাও এদিনের বৈঠকে বলেন তিনি।
কল্যাণের জায়গায় এলেন কাকলী, দায়িত্ব পেলেন শতাব্দীও

সোমবারের বৈঠকের পর বদলে যায় পরিস্থিতি। লোকসভার সাংসদদের পারফরমেন্সে অখুশী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে এর দোষ চাপান শ্রীরামপুরের সাংসদের ঘাড়ে। যদিও সেই সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিফ হুইপের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সাথে সাথেই সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এক কথায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসরি নেত্রীকে আক্রমণ করে ফেলেন। সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত বেসুরো কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছুটা হলেও বাগে আনতে ময়দানে যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবেন বলে জানান অভিষেক। তবে কল্যাণ যে সরাসরি আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? তাই অভিষেকের আশ্বাসেও ভবি ভুলল না। কল্যাণের দেওয়া ইস্তফা সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই দলের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, কল্যাণের পর সংসদে তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কে হবেন? কল্যাণের ইস্তফার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নতুন মুখ্য সচেতকের নাম ঘোষণা করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। কাকলি ঘোষ দস্তিদার লোকসভায় তৃণমূলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পাচ্ছেন। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়ে দিল লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের চিফ হুইপ-এর পদে বসছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। অন্যদিকে লোকসভায় তৃণমূলের ডেপুটি লিডার হচ্ছেন সাংসদ শতাব্দী রায়। মঙ্গলবার দুপুর দুটোয় অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের চিফ হুইপের পদ থেকে সরে, চেয়ারপার্সনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারপার্সন তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং এই ভূমিকায় তাঁর অবদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বর্ষীয়ান সংসদ সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে, চেয়ারপার্সন তাৎক্ষণিকভাবে লোকসভায় তৃণমূলের নতুন চিফ হুইপ হিসেবে ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং লোকসভায় তৃণমূলের নতুন ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায়কে মনোনীত করেছেন।”
‘ঘরে বসে থাকব না’— উদয়ন গুহ

কোচবিহারের খাগড়াবাড়িতে আক্রান্ত হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়। কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি বুলেট প্রুফ গাড়িতে ইট, এমনকি পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তবে শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে ‘খুনী’ বলে আক্রমণ করলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে নারাজ উদয়ন গুহ। বরং শুভেন্দু অধিকারীর মত ‘বাংলা বিরোধী’রা কোচবিহারে আসলে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে, তার একটা আগাম ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন উদয়ন গুহ। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী স্পষ্ট বললেন, “এতদিন তৃণমূল আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করেছেন, আমরা সেটা গণতান্ত্রিকভাবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু বাংলা ভাষা, বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের মুখের ভাষা আমাদের মাতৃভাষা যদি আক্রান্ত হয়, তৃণমূল কর্মীরা চুপ থাকবে না। বাঙালি হিসেবে আমরা কেউ ঘরে বসে থাকব না। ওদের ভাষাতেই এসব মূর্খদের বুঝিয়ে দেব। খুব স্পষ্ট করে বলছি, বাংলা ভাষাকে অপমান করলে, আক্রমণ করলে, আমি ঘরে বসে থাকব না। মনে রাখতে হবে বাঙালিদের আক্রমণ করলে নিস্তার নেই।”
‘পুলিশ আর উদয়ন গুহ মিলে আমাকে খুন করতে চেয়েছিল’— শুভেন্দু

একদিকে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, অপরদিকে সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে খুন করার অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার কোচবিহারে এসপি অফিস অভিযানে যোগ দিতে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাগডোগরা থেকে সরাসরি গাড়িতে কোচবিহার যাওয়ার পথে একাধিক জায়গায় তাঁর কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা। তবে অশান্তি শুরু হয় বিরোধী দলনেতার কনভয় খাগড়াবাড়ি পৌঁছতে। হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়। দেখানো হয় কালো পতাকা। পুলিশের সামনেই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, ভাঙে কাচ। এরপরই সরাসরি জেলা পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে শুভেন্দু বলেন, “আমাকে মেরে ফেলার জন্য এগুলো করা হয়েছে। সবটাই হয়েছে পুলিশের সামনে। আসলে পুলিশ বিরোধী দলনেতাকে খুন করতে চেয়েছিল। আমাকে খুন করতে চাওয়ার পরোক্ষ আসামি এই জেলার পুলিশ সুপার।” তবে শুধু কোচবিহার জেলা পুলিশ নয়, গোটা ঘটনায় কোচবিহার জেলার দিনহাটার বিধায়ক এবং রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদায়ন গুহকেও কার্যত খুনী বলে তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, “খুনের মামলার প্রত্যক্ষ আসামি উদয়ন গুহ। এই ঘটনা প্রমাণিত যে আমাকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে উদয়ন গুহ। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে এসে আমাকে খুন করতে চেয়েছে।” অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, ভাঙে কাচ। গোটা ঘটনার পিছনে নাম না করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদককে দায়ী করে শুভেন্দু বলেন, “আসলে ভাইপোর নির্দেশে এই কাজটা করানো হয়েছে।” তবে এই আক্রমণের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তা স্পষ্ট করে দিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, “আর যদি পুলিশের গাড়িতে না থাকতাম তাহলে আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হত না আমাকে দেখতে মর্গ যেতে হত।”
‘মমতাকে এবার ভবানীপুরে হারাব’— শুভেন্দু অধিকারী

ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর চ্যালেঞ্জ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে এবার আর নন্দীগ্রাম নয়, লক্ষ্য— ভবানীপুর। এবার কি তবে হাইভোল্টেজ লড়াই হতে চলেছে ভবানীপুরে? মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের পর খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ভবানীপুরেই তাঁকে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিরোধী দলনেতার স্পষ্ট বক্তব্য, “মমতাকে আমি নন্দীগ্রামে হারিয়েছি, এবার ২০২৬ এ ভবানীপুর হারাব।” প্রসঙ্গত ২০২১ সালে নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী ১,১০,৭৬৪ টি ভোট পান, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮০৮টি ভোট, শতাংশ হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী পান ৪৮. ৪৯ শতাংশ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ৪৭. ৬৪ শতাংশ ভোট। অপরদিকে ওই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ভবানীপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোট পান ৮৫,২৬৩ টি ভোট। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল পান ২৬,৪২৮টি ভোট। এদিন শুভেন্দু বার্তা দেন, “আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তৃণমূলের মালিককে হারিয়েছি মনে রাখবেন। শুভেন্দু অধিকারীকে ভয় দেখানো যাবে না। যখন সিপিএমের সময় , সিপিএম যখন ২৩৫ তখন লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়েছি।”
কল্যাণের ঢালাও প্রশংসা শুভেন্দুর, অন্য কিছুর ইঙ্গিত কী?

অভিষেকের থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক বড় রাজনীতিবিদ। উত্তরে দাঁড়িয়ে এভাবেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত প্রশংসা করতে শোনা গেল শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। সোমবার দলীয় সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই লোকসভার দলীয় সাংসদদের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। লোকসভায় দল পরিচালনার বিষয়ে তিনি যে আদৌ খুশি নন, ওই বৈঠকেই তা স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার তৃণমূলের দলনেতা হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন। তবে লোকসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষোভ থাকলেও শেষ পর্যন্ত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই বর্তায় মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব। তবে সেই দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে সঙ্গে সঙ্গেই সেই পদ ছেড়ে দেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। এখানেই থেমে থাকেননি, দলের এমনকী দলনেত্রীর বিরুদ্ধে পর্যন্ত মুখ খোলেন তিনি। আর এই মুহূর্তে ‘বিদ্রোহী’ কল্যাণের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল বিরোধী দলনেতাকে। মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষিত মানুষ। এটা ঠিক মাঝে মাঝে উনার ভাষা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়, কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করা ঠিক না। রাজনীতিবিদ হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অনেক এগিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।” এর আগেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘হেলিকপ্টার লিডার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন শুভেন্দু। এদিনও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে একইভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা। বললেন, “ভাইপো ২০১১ সালের পর রাজনীতিতে এসেছে। ২০১১ সালে যখন আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সরকার বদল করি, তখন দিল্লি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ভাইপোকে আমদানি করে। ওর একমাত্র পরিচয় যে ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাইপো। ২০১১ সালের আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আইনগতভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা বড় ভূমিকা আছে। সেটা অস্বীকার করা যাবে না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ, তাহলে কি দল ছাড়ছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়?

“যারা দিদিকে গালাগাল দেয় অসম্মানিত করে, দিদি তাদেরকেই সম্মানিত করে।”— অবাক হলেও এই বক্তব্যটি তৃণমূলের শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আসল ঘটনা, দলীয় সাংসদদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের ভার্চুয়াল মিটিং, আর তারপরই বিস্ফোরক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। না শুধু বিস্ফোরক বললে হয়তো কম বলা হবে, শেষে কিনা আক্রমণই করে বসলেন দলনেত্রীকেই! সোমবার লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের এবং ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কিভাবে আরও বেশি আক্রমণ শানানো যায়, তা নিয়ে দলের সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর ওই বৈঠকেই লোকসভার সাংসদদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকি লোকসভায় দলীয় সাংসদদের ফুল মার্কস দিলেও লোকসভার সাংসদদের কাজে যে তিনি অখুশি তা স্পষ্ট করে দেন। বিশেষ করে হাউজের ফ্লোরে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও সেই বৈঠকে তিনি জানান। এমনকী লোকসভায় তৃণমূল দলনেতার দায়িত্ব থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেন। তবে মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব বহাল রাখেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সূত্রের খবর লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক হিসেবে নাম ঘোষণার পরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরই একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন কল্যাণ। এমনকী দলীয় সাংসদদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়? এখানেই শেষ নয়, তীব্র কটাক্ষ করেন খোদ দলনেত্রীকেই? তৃণমূলের সাংসদরা যে লোকসভাতেই আসেন না, এদিন তা নিয়ে প্রথম ক্ষোভ উগরে দিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিনের পর দিন লোকসভায় আসেন না। সে অসুস্থ হয়ে থাকলে সেটা কি আমার দোষ। আমি একা একা লোকসভা চালাব নাকি? কাকলি ঘোষ দস্তিদার প্রতিদিন লোকসভায় থাকেন না, সেটাও কি আমার দোষ? লোকসভায় আমাদের কজন সদস্য থাকেন বলুন তো, সবাই তো বাড়িতে বসে থাকে। নয়তো নিজের লোকসভা কেন্দ্রে।” এমনকি দলীয় সাংসদদের নাম ধরে ধরে তাদের পারফরমেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “পার্থ ভৌমিক কখনও লোকসভায় আসবে না, বাঁকুড়া এমপি অরূপ চক্রবর্তী আসেনি। দক্ষিণ কলকাতায় একদিন মাত্র আসবে। কি বলছেন কি? দেব কি করে কিছুই বুঝতে পারি না।” এদিনই নিজের বক্তব্যে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করে বসেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “কিভাবে লোকসভা চালাতে হয়, মমতা দি কি জানেন? কারা আসে কারা আসে না সেটা কি উনি জানেন?” অধিবেশন চলাকালীন সংসদ সদস্যদের এই অধিবেশনে থাকা সাধারণত দস্তুর, কিন্তু বাংলা থেকে জেতা তৃণমূল সদস্যরা যে আদৌ লোকসভাতে উপস্থিত থাকেন না, এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাও স্পষ্ট করে দেন। বলেন, “কাকলি কখন আসে কখন চলে যায় জানি না। একমাত্র প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ, বাপি হালদার, আবু তাহের এরা থাকে, এই তো কয়েকজন। উনি তখন কখনও বাকিদের বলেন না, কেন তোমরা লোকসভাটা ঠিকঠাক করো না? আমার দোষ? উনি যাদের এমপি বানিয়েছেন তাঁরা কেউ লোকসভায় আসে না। দক্ষিণ কলকাতার এমপি ৭ বছর হল একটাও স্পিচ নেই, মেন্সন নেই। সব এমপি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ নাটক করছে, থিয়েটার করছে, সেটাও আমার দোষ। বলছে কো-অর্ডিনেশন হচ্ছে না।” কল্যাণের আরও সংযোজন, “চেঁচানোর জন্য কে? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। উনি তো কাউকে লোকসভায় আসতে বলেন না। আসলে মমতা দি শুধু আমার দোষ দেখে, অন্যের দোষ দেখে না। ৬ বছর হয়ে গেল একেক জন লোকসভায় মুখ পর্যন্ত খোলে না।” সূত্রের খবর সোমবারের বৈঠকে লোকসভার সাংসদদের পারফরম্যান্স বিচার করতে গিয়ে কার্যত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর অনেকটা ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল সুপ্রিমো। যেহেতু তিনি দলের মুখ্য সচেতক, তাই লোকসভায় সাংসদদের খারাপ পারফরমেন্স নিয়ে পরোক্ষভাবে কল্যাণকে দায়ী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, “আমি বড়লোকের ছেলে নই। অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ থেকে পড়ে আসিনি। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি লোকসভায়। সবচেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ থাকি স্লোগান দিই সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাই। আর আমি নাকি ইন-এফেক্টিভ! যদি হার্ভার্ড-অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করে আসতাম, দামি শাড়ি পরতাম, বিশাল ইংরেজি বলতাম তাহলে দলে সবথেকে বেশি এফেক্টিভ আমি হতাম। যথেষ্ট হয়েছে, অনেকদিন চিফ হুইপের কাজ করেছি আর না।” গোটা বিষয় নিয়ে কার্যত নাম করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কল্যাণের বিশ্লেষণ, “যারা দিদিকে গালাগাল দেয় অসম্মানিত করে, দিদি তাদেরকেই সম্মানিত করে। এটাই এই দলের এখন নীতি হয়ে গেছে।” যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, এক মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে বারে বারে তাঁর অস্বস্তির কথা দলকে জানালেও দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলনেতা হওয়া কল্যাণের মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব ছাড়ার অন্যতম কারণ।
ফের কি হারানো মর্যাদা ফিরে পেতে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীর, বাড়ছে জল্পনা

৬ বছর আগে এই ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করেছিল মোদী সরকার। একই সঙ্গে এই দুই প্রদেশকে ভেঙে দুটি আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও সে সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা সরকার সময় মতো ঠিক ফিরিয়ে দেবে। এর মাঝেই চলতি বছরের শুরুতেই পাহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নানা মহল থেকে নানা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তবে কি জম্মু ও কাশ্মীরকে তাদের হারানো রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে? আর এই জল্পনাকেই আরও উসকে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় করা জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার একটি পোস্ট। গতবছর জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন জয়ী হয়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হন ওমর আবদুল্লা। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরে কী হতে পারে, এই নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা আমি শুনতে পাচ্ছি। তবে এই ক্ষেত্রে আমি আগ বাড়িয়ে বলতে চাই, ৫ অগস্ট কিছুই হবে না— সৌভাগ্যক্রমে খারাপ কিছু ঘটবে না, তবে দুর্ভাগ্যবশত ইতিবাচক কিছুও ঘটবে না।” জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বর্ষপূর্তির আগের সন্ধ্যায় দিল্লিতে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। এই বৈঠক যেমন হয়েছে সরকারি আমলা এবং সরকারের উচ্চপদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে। তেমনই গত সোমবার দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো প্রধান তপন কুমার ডেকা এবং স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহনের। তবে সবগুলো বৈঠকই হয়েছে চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। বৈঠক নিয়ে কোনও তথ্যই বাইরে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকী আজ, অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালেও এনডিএ সাংসদদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন অমিত শাহ। যার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে জল্পনা আরও বাড়ছে। এমনকী এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও দেখা করে এসেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বড় কোনও সিদ্ধান্ত আসে কিনা, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।