সুদীপের বদলে লোকসভার দলনেতা হলেন অভিষেক

লোকসভায় দায়িত্ব বাড়ল অভিষেকের। আর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, তাঁর বদলে লোকসভার দলনেতা মনোনীত হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, “আমাদের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় খুব অসুস্থ। তাই কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন অভিষেক। তবে চিফ হুইপ পদে থাকবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ই।” একথা বাস্তব, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ লোকসভার তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বেশিরভাগ দিনই অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। সূত্রের খবর, আর তাঁর অবর্তমানে এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় দলের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার সাংসদের তিনি জানান, “রাজ্যসভার কাজ ঠিক হলেও লোকসভায় সেটা হচ্ছে না।” আর সেই কারণেই তিনি যে অভিষেককে দায়িত্ব দিচ্ছেন লোকসভার দলনেতা হিসেবে, তা এদিন স্পষ্ট করে দেন এই বৈঠকে। তবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিপ হুইপ ঘোষণা করলেও এই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। যদিও কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
‘এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়া হবে না’— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

ভোটের ঢাকে কাঠি বাজিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৬-কে সামনে রেখে জোরকদমে ভোটের ময়দানে রাজ্যের শাসক দল। একাধিক ইস্যুতে, বিশেষ করে এসআইআর বা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের উপর নির্যাতনের ঘটনা সহ একাধিক ইস্যুতে ইতিমধ্যে ময়দানে রাজ্যের শাসক দল। আরও ভালো করে বললে ভোটের ক্রিজে এখন থেকেই হাফ সেঞ্চুরি করার পথে জোড়া ফুল শিবির। সোমবার নির্বাচনী প্রস্তুতিতে জেলা ধরে ধরে বৈঠক শুরু করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে সোমবার ক্যামাক স্ট্রিটে বৈঠক করেন তিনি। আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এই দুই জেলা নিয়ে বৈঠক হয়। তবে নির্বাচনের আগে যে কোনোভাবেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রেয়াত করা হবে না এই দুই জেলার নেতৃত্বকে রীতিমত বুঝিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনে যে রাজ্যের শাসক দল ‘অল-আউট’ খেলতে নামবে সেই বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “সবাইকে সবার সাথে চলতে হবে। কোনও ভাবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রাখবেন না। এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়া হবে না।” ২০২১-এর বিধানসভা ও ২০১৯ সালের লোকসভায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে রীতিমত লজ্জাজনক ফলাফল হয় তৃণমূলের, যার মধ্যে অন্যতম ছিল এই দুই জেলাও। তবে ২০২৪-এর লোকসভায় কিছুটা হলেও মান রক্ষা হয় কোচবিহারে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কোচবিহার জেলা নেতৃত্বকে অভিষেকের নির্দেশ, ‘‘কোচবিহারে লোকসভার ফল ধরে রাখতেই হবে। ব্লক ভিত্তিক প্রচারে আরও বেশি করে জোর দিতে হবে।” অসম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এই বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনকে আরও সক্রিয় করতে হবে বলে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “অসম সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে আরও জোর দিতে হবে।” জেলার বাইরে বা নিজের এলাকার বাইরে আর সময় কাটানো বা সংগঠন নয়, নেতাদের এবার থেকে নিজের এলাকাতেই সব জায়গায় প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করতে হবে বলেও বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, “নিজের এলাকায় বেশি করে সময় দাও। যত বেশি সম্ভব এলাকায় সময় কাটান। পাড়ায় উপস্থিত থেকে বুঝবেন মানুষ কী চাইছে। সেই অসুবিধা দূর করতে হবে।’’ সোমবার থেকে জেলাওয়াড়ি বৈঠক শুরু করেছেন অভিষেক। বুধবার বৈঠক হবে মালদহ ও জলপাইগুড়ির। বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে দক্ষিণ দিনাজপুর ও জঙ্গিপুর নিয়ে। এরপরেই ১১ অগাস্ট বৈঠক হবে উত্তর দিনাজপুর জেলা নিয়ে। বৈঠকে থাকবেন জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান, যুব সভাপতি, সকল বিধায়ক ও সাংসদরা। আগামিকাল জেলার ১৯ জায়গায় প্রতিবাদ সভা হবে। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই জেলা ও ব্লক স্তরে সংগঠন পদাধিকারীদের নাম প্রকাশ হবে। জনসংযোগে দক্ষ এমন নেতাদের সামনে রেখেই এগোবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া এগোতে পারে। সমস্ত জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ৫ তারিখের বৈঠকে প্রায় ৯ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
অসম সরকারের এনআরসি নোটিশে গুরুত্ব না দেওয়া নির্দেশ অভিষেকের

হেমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার যদি কোনো নোটিস পাঠায়, তাতে যেন কেউ সাড়া না দেয়। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই আসামের সীমান্তবর্তী কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার, আরও স্পষ্ট করে বললে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার বাসিন্দাদের এনআরসির নোটিশ পাঠাচ্ছে আসাম সরকার। যা যথেষ্ট উদ্বেগের। ইতিমধ্যে এই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এই দুই জেলার নেতৃত্বদের স্পষ্ট বার্তা দিলেন অভিষেক। এদিন এই কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ক্যামাক স্ট্রিটে এই দুই জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করে, সেখান থেকে নির্দেশ দেন, “অসম সরকার নোটিস পাঠালে কেউ গ্রহণ করবেন না, কেউ যাবেন না। ভয় ও পাবেন না। অসম সরকারের এনআরসির কোনও নোটিস গ্রহণ করবেন না। কেউ কোনও কাগজ দেখাবেন না। অসমেও কেউ যাবে না, এটাই দলের স্ট্যান্ড।” সোমবার দুপুরে ক্যামাক স্ট্রিটে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করেন অভিষেক। জানা গিয়েছে, সেখানে ব্লক স্তরে বেশ কিছু রদবদলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
খড়দহে বহুতল থেকে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র, আটক এক

ঝা চকচকে বহুতল। আর সেখানেই অস্ত্রভাণ্ডার! গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখানে তল্লাশি চালাতেই চক্ষু চড়কগাছ। উদ্ধার ১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র, সাথে ১০০০ রাউন্ড গুলি। ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের রিজেন্ট পার্ক এলাকায়। প্রবল শোরগোল এলাকায়। তবে ঠিক কী কারণে আবাসনে এত অস্ত্র মজুত করা হয়েছিল? তাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। এর পিছনে কী বড়সড় ষড়যন্ত্রের ছক? খড়দহের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় রয়েছে এই বহুতল প্রতিভা মঞ্জিল। সোমবার সকালে হঠাৎই সেই আবাসনে হানা দেয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা শাখা শুরু করে তল্লাশি। আর তাতে উদ্ধার হয় ১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র সাথে হাজার রাউন্ড গুলি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্ল্যাট থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিলেছে নগদও। আটক করা হয়েছে লিটন চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তিকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এই অস্ত্র ভাণ্ডারের রহস্যভেদ হবে বলে আশাবাদী তদন্তকারীরা।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ডাক প্রসেনজিতের

কয়েকদিন আগে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। একটি হিন্দি সিনেমার প্রিমিয়ারে সাংবাদিক সম্মেলনে একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক বাংলায় প্রশ্ন করায় রীতিমত সেই সাংবাদিককে “কেন বাংলায় প্রশ্ন করছেন?” তা নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যা নিয়ে তোলপাড় হয় নেটপাড়া। ট্রোলড হতে হয় টলিউডের সুপারস্টারকে। এবার ভিন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের উপর নির্যাতনের মত ঘটনায় নতুন করে ভাষা আন্দোলনে নামার কথা বললেন প্রসেনজিৎ। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের বার্তা দিয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী বীরভূমের মাটি থেকে বিশাল মিছিল করে এই আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্থও গড়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সোমবার বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা ছিল, আছে, থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে আছি। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” এর আগে বাংলায় কথা বললেই নির্যাতনের ঘটনায় সরব হয়েছিলেন রূপম ইসলাম। রবিবার এই নিয়ে এক বিস্ফোরক পোস্ট করেন তিনিও। এবার এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
বাংলায় রণকৌশল ঠিক করতে সোমে সাংসদদের নিয়ে বৈঠক অমিত শাহর

মমতার পাল্টা অমিত শাহ। একাধিক ইস্যুতে যখন বিজেপিকে চাপে ফেলার কী রণকৌশল হবে, তা নির্ধারণ করতে আজ বিকেলে দলীয় সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ঠিক সেইদিনই অর্থাৎ সোমবার বাংলার বিজেপি সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন অমিত শাহও। এইদিন সন্ধ্যেবেলা বাংলায় ১২ জন বিজেপি সাংসদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা শাহ’র। ইতিমধ্যে বিহারের ভোটের আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে তুমুল হইচই। এই এসআইআর-এর বিরোধিতা করে সুর চড়িয়েছে ইন্ডিয়া জোট, যার অন্যতম শরিক তৃণমূল। শুধু দলগত ভাবে নয়, সরকারি ভাবেও এই এসআইআর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। চলতি বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া জোট নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচী নিয়েছে তৃণমূলের প্রস্তাবে সায় দিয়ে। সেই বিক্ষোভে থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বাংলায় ২৬-শের আগে এই বাংলা ও বাঙালি ইস্যু আর এসআইআর নিয়ে আগাম সতর্কতা নিতে চাইছে পদ্ম শিবিরও। বিভিন্ন রাজ্যের মতো বাংলায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী লাগু হলে কী ভূমিকা হবে বিজেপি সাংসদদের, তা স্থির করতে বাংলার সাংসদদের নিয়ে শাহের বৈঠক বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বাংলা ও বাঙালি ইস্যুতে খনিকটা হলেও বাড়তি সুবিধাতে তৃণমূল। তার পাল্টা রণকৌশল ঠিক করতে দলীয় সাংসদদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরাজ্যে এসআইআর লাগু হলে কীভাবে তার মোকাবিলায় ময়দানে নেমে কাজ করবে বিজেপি, তা নিয়ে বাংলার সাংসদদের পাঠ দেবেন অমিত শাহ। এর পাশাপাশি, আগামী ৯ আগস্ট অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের একবছরে যে নাগরিক মিছিলের ডাক দিয়েছে তাঁর পরিবার, তাতে পতাকা ছাড়া অংশ নিতে চায় বিজেপি। সেই মর্মে অমিত শাহকে নিজেদের কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে।
তীর্থযাত্রীদের ‘জলকর’? শ্রাবণী মেলায় ‘জিজিয়া’ তুল্য ফি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ সুকান্তর

তীর্থযাত্রীদের ‘জলকর’? শ্রাবণী মেলায় ‘জিজিয়া’ তুল্য ফি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ সুকান্তর। তারকেশ্বরের বাবার মাথায় জল ঢালতে যাওয়া পুর্ণার্থীদের জল তোলার আগে গঙ্গায় চান করলেই দিতে হচ্ছে জিজিয়া কর। এমনই অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি। হুগলির তারকেশ্বরে শ্রাবণ মাসে শুরু হয়েছে এক মাসব্যাপী শ্রাবণী মেলা। শিবভক্তদের বাঁকে করে গঙ্গাজল নিয়ে বহু কিলোমিটার হেঁটে তারকেশ্বর মন্দিরে জল ঢালার সেই বহুযুগের প্রথা নিয়ে এবার রাজনৈতিক বিতর্ক। শনিবার রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, “পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনপ্রতি ১০ টাকা করে ‘ফি’ আদায় করছে। গঙ্গাস্নানের জন্য ফি নেওয়া হচ্ছে। এ যেন ‘জিজিয়া কর’! হিন্দুদের ধর্মাচরণে কর চাপাচ্ছে তৃণমূল সরকার।” টুইট করে সুকান্তর প্রশ্ন, “এটা কি নিছক রাজস্ব আদায়, না কি বাঙালি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে এক নিঃশব্দ বার্তা যে ধর্মাচরণও এখন করযোগ্য?” তাঁর অভিযোগ, “বৈদ্যবাটীর নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গাজল সংগ্রহের সময় এই অর্থ নেওয়া হচ্ছে। শুধু এতেই থেমে থাকছে না, তোলাবাজি শুরু হয়ে গিয়েছে। সাধারণ ভক্তরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এটা প্রশাসনের নামে একপ্রকার চাঁদাবাজি,” বলেও দাবি তাঁর। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকার কোনও বাধ্যতামূলক ফি চাপায়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, পানীয় জল, স্বাস্থ্যপরিষেবা, থাকার ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিয়েছে। ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে, চলছে সিসিটিভি-র মাধ্যমে নজরদারি। হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে বৈঠক করেছেন, যাতে ভক্তদের কোনও অসুবিধা না হয়। বহু সংগঠন বিনামূল্যে খাওয়া, চিকিৎসা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছে। তাঁদের দাবি, কোনও বাধ্যতামূলক ‘জলকর’ নেই। কিছু ঘাটে সাফাই ও পরিষেবার খরচ মেটাতে ভক্তদের থেকে স্বেচ্ছায় সামান্য অনুদান নেওয়া হয়ে থাকে, যা বহু বছর ধরেই প্রচলিত। তবে, বিজেপি এই ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রচার শুরু করেছে। তৃণমূল এখনও পর্যন্ত সুকান্তর অভিযোগের সরাসরি উত্তর দেয়নি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যখন তৃণমূল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, তখন পাল্টা ধর্মীয় ইস্যু তুলে বিজেপি রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে। ২০২৬-এর ভোটের আগে রাজ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সুপ্রিম কোর্টে আবারও ঝুলে রইল DA মামলার শুনানি

সোমবারেও সুপ্রিম কোর্টে DA মামলায় কোনও রায়দান হল না। আবারও পিছিয়ে গেল শুনানি। আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্ত মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এদিন আদালতকে বলেন, রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ(DA)-র টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করেছে। কত টাকা বকেয়া রয়েছে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কত টাকা প্রাপ্য তার হিসাব কষে বের করতে হবে। আর সে কারণেই রাজ্য সরকারকে আরও দু’মাস সময় দেওয়া হোক। যদিও এর আগে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২৭ জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ২৭ তারিখ পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকার সেই টাকা মেটায়নি। সোমবার রাজ্য সরকারের আইনজীবীর সওয়াল জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতিরা এখনই রাজ্য সরকারকে সময় দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। বরং তাঁদের পর্যবেক্ষণ, সারা দেশব্যাপী এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে। তাই এই মামলার সওয়াল জবাব আরও বিশদে শুনতে চায়। সে কারণেই আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতারা এদিন বলেন, রাজ্য সরকার বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্যই মিথ্যাচার করছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেওয়ার পর ২ মাসেরও বেশি হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার চাইলে এর মধ্যে কমিটি গঠনের মাধ্যমে হিসাব কষে ফেলতে পারত। গোটা ডেটাবেস রাজ্য সরকারের কাছেই রয়েছে। এখন অজুহাত খুঁজতে এই সব বাহানা করছে। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আদালতের কাজ আইন বাতলে দেওয়া। আদালত তো আর কোয়ান্টিফাই করতে পারবে না। কোয়ান্টিফাই কে করবেন না করবেন, সেটা তো আদালতের বিষয় নয়। আসলে ওরা মামলার শুনানি করতে চাইছিলেন না। যদি আমরা জিতি, ১০০ শতাংশই দিতে হবে।”
প্রয়াত ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন

শেষ হল একটা অধ্যায়। দেশের আদিবাসী আন্দোলনের একটা ইতিহাস যেন শেষ হয়ে গেল। প্রয়াত হলেন শিবু সোরেন। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সোমবার সকালে দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। দেশের রাজনীতিতে তিনি ‘গুরুজী’ বলে পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত সোরেন এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ্যে নিজের বাবার মৃত্যুর খবর সামনে এনেছেন। প্রসঙ্গত, কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে জুনের শেষ সপ্তাহে শিবু সোরেন দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এক মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর ৮১ বছর বয়সে সোমবার মৃত্যু হল তাঁর। ছেলে হেমন্ত লেখেন, ‘শ্রদ্ধেয় দিশোম গুরুজি আজ আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আজ আমি শূন্য হয়ে গেছি…’ সোমবার সকাল ৮ টা ৫৬ মিনিটে প্রয়াত হন শিবু সোরেন। প্রায় এক মাস ধরে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ছিলেন। উল্লেখ্য, গতকালই জানা গিয়েছিল শিবু সোরেনের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। এই খবর পেয়ে রবিবারই স্ত্রী কল্পনা সোরেনকে নিয়ে দিল্লি পৌঁছান ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খণ্ড তথা জাতীয় রাজনীতিতে শিবু সোরেন এক উল্লেখযোগ্য নাম। আদিবাসী এই নেতা ৩৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ৮ বার লোকসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সামলেছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। তিনবার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি। ঝাড়খণ্ড রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন শিবু। জাতীয় রাজনীতিতেও তাঁর প্রভাব কিছু কম ছিল না। রাজ্যের মানুষের কাছে শিবু সোরেন ছিলেন দিশোম গুরু (দেশের গুরু)।
আবারও স্বমহিমায় ফিরলেন বীরভূমের কেষ্ট, দিলেন ধিক্কার মিছিলের ডাক

গত মাসের শেষ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম সফরে গিয়ে দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সহ একাধিক নেতার নাম ধরেই এসআইআর-এ যেন কোনও ভোটারের নাম অনৈতিক ভাবে কাটা না হয় তার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকী প্রয়োজনে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ইঙ্গিত ছিল সেই বার্তায়। দলের সুপ্রিমোর কাছ থেকে সবুজ সংকেত মিলতেই আবারও আসরে বীরভূমের কেষ্ট। তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক পদে বসেই আবারও সেই চেনা ছন্দে ফিরলেন তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল। এমনকী কোর কমিটির বৈঠক থেকেই সোমবার জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিলের ডাক দেন। শনিবার সিউড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে কালি লাগানোকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এই ঘটনায় সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমরা যখন বিরোধী ছিলাম তখন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কালি লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। কারণ এটা তৃণমূলের রাজনৈতিক শিক্ষা নয়। আজ বিজেপির আমলে এমন কাণ্ড ঘটছে। এটা সভ্যতা নয়, রাজনীতি নয়— এটা অপসংস্কৃতি।” কোর কমিটির বৈঠক থেকেই এই ঘটনার বিরুদ্ধে কর্মসূচি রূপায়ণের রূপরেখাও তৈরি করে দেন অনুব্রত। এই ধিক্কার মিছিলে নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। কোর কমিটির বৈঠকে এদিন হাজির ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি কাজল শেখ সহ ৯ সদস্য। দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এদিন থাকতে পারেননি মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তবে শুধুমাত্র ধিক্কার মিছিলই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে ‘ভাষা আন্দোলন’ ঘিরে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে ব্লক স্তরে। বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক রাশ আবারও যে নিজের হাতে তুলে নিতে মরিয়া কেষ্ট, রবিবারের বৈঠকে তার সক্রিয় ভূমিকা যেন সেই ইঙ্গিতই দিল।