ভাষা-আন্দোলনে বোলপুরের পর এবার মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফর

বিজেপি শাসিত ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর নিপীড়ন এবং বাংলা ভাষায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ বলে তাদের আটক করার প্রতিবাদ চলতি মাসের মাঝামাঝি রাস্তায় নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই বিজেপিকে বাংলা বিরোধী তকমা দিয়ে প্রবল আক্রমণ শানিয়েছিলেন। এমনকী ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলা ভাষার অপমানে ভাষা আন্দোলনেরও ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা রাজ্যজুড়ে সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করারও আহ্বান করেন তিনি। এমনকী এই ভাষা আন্দোলন যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমি শান্তিনিকেতন থেকেই সূচনা হবে সেকথাও জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেইমতো ২৮ জুলাই বোলপুরের ভাষা আন্দোলনের মিছিলেও পা মেলান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের পর এবার জঙ্গলমহল। আগামী ৬ আগস্ট ঝাড়গ্রাম শহরের রাজবাড়ির মোড় থেকে সার্কাস ময়দান পর্যন্ত বিশিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পা মেলাবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বিরোধী এই মিছিলে আদিবাসীরা ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নেবেন। জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাষা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতেই বুধবার বিধানসভা ভবনে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিধায়ক দুলাল মুর্মু, বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা, গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাতো-সহ জঙ্গলমহলের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি সকলকে ওই দিনের কর্মসূচির খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জঙ্গলমহল সফরের একদিন আগেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওখানে পৌঁছে যাবেন বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এদিনের বৈঠকে ভাষা আন্দোলন ছাড়াও বিশ্ব আদিবাসী দিবস সহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাঙালি অস্মিতায় শান দিয়ে ২০২৬ বিধানসভার আগে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফর যে বিজেপির বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
আবারও মেট্রো বিভ্রাট, নাকাল নিত্যযাত্রীরা

আবারও মেট্রো বিভ্রাট। নাকাল নিত্যযাত্রীরা। এমনিতেই কবি সুভাষ প্লাটফর্মের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরা পড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্টেশন। তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে মেট্রোয় আগুনের ফুলকি দেখায় সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় পরিষেবা। সকাল আটটা নাগাদ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে দমদমগামী একটি ট্রেনের নীচ থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখা যায়। সাথে সাথে খালি করে দেওয়া হয় কামরা। পরে সেটিকে কারশেডে পাঠানো হয়। এর জন্য প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রো পরিষেবা। সকাল বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ অফিসযাত্রীরা। এই ঘটনায় যাত্রী সুরক্ষা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এভাবে দিন দিন মেট্রো পরিষেবার যে ক্রমাগত অবনতি ঘটছে এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ তার পরেও কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন অনেক যাত্রী। যদিও এ বিষয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
বন্ধু দেশ ভারতের উপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক চাপালো ডোনাল্ড ট্রাম্প

এতদিন আমেরিকার বন্ধু দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্ব নিয়েও নানা মহলে নানা চর্চা হয়েছে। এবার সেই বন্ধু দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অতিরিক্ত শাস্তিমূলক পেনাল্টি আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত রাশিয়াকে সমর্থন করায় আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা হলেও শিথিল হয় বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। এমনকী অতি সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ও পাকিস্তানকে প্রচ্ছন্ন মদত দিতে দেখা গেছে আমেরিকাকে। সেসময় হোয়াইট হাউসের অনেক দাবিকেই নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল ভারত সরকারের তরফ থেকে। তারই ফলশ্রুতি এই শুল্ক বৃদ্ধি বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে। এরই সঙ্গে তিনি ব্রিকস সম্পর্কে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, ডলারের উপর আক্রমণ করছে ব্রিকস। হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পকে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে এখনও কথা বলছি। তবে এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে ব্রিকস। ব্রিকস আসলে এমন দেশগুলির একটি গ্রুপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং ভারতও এর সদস্য। এটি ডলারের উপর আক্রমণ করছে এবং আমরা কাউকে ডলারের উপর আক্রমণ করতে দেব না।” ট্রাম্পের মতে ভারত তাঁর বন্ধু। তা সত্ত্বেও মার্কিন পণ্যের ওপর বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করে ভারতই। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেন। ট্রাম্প বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আমার বন্ধু, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য করেন না। তারা আমাদের দেশে অনেক পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু আমরা বিক্রি করতে পারি না। কেন? কারণ তাদের ট্যারিফ অনেক বেশি। এখন তারা এটি অনেকাংশে হ্রাস করতে ইচ্ছুক, তবে দেখা যাক এর পরে কী হয়।” এমনকী ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, “এই সপ্তাহের শেষের দিকে, আপনারা জানতে পারবেন যে আমরা ভারতের সঙ্গে কোনও চুক্তি করেছি কি না বা তাদের কোনও ফি দিতে হবে কি না।” অন্যদিকে আমেরিকার এই ঘোষণার পর ভারত সরকারের তরফ থেকেও বিবৃতি দিয়ে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তাতে বলা হয়েছে, “ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক উপকারী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হওয়া উচিত। এর জন্য গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে। ভারত এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” অতীতেও আমেরিকা অনেক দেশের উপরই এ ধরনের বাণিজ্য শুল্ক চাপিয়েছে। তবে ভারতের উপর এ ধরনের বাণিজ্য শুল্ক চাপানোয় দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।