‘শিশুও ছাড় পাচ্ছে না!’–ভিডিও শেয়ার করে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপি শাসিত ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার এবং তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিজেপির বিজেপির সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালি অস্মিতায় শান দিতে কলকাতার রাজপথেও নেমেছেন তিনি। এমনকী ২১শের মঞ্চ থেকেও এই ইস্যুতে কেন্দ্রকে কেন্দ্রকে নিশানা করে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের জেলায় জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার বার্তাও দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আসলে বাঙালি সেন্টিমেন্টকে যে ২০২৬শের বিধানসভায় পাখির চোখ করে এই ইস্যুকে একেবারে তৃণমূল স্তরের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা একপ্রকার স্পষ্ট। এবার প্রমাণ স্বরূপ রীতিমত ঘটনার ভিডিও নিজের সোস্যাল সাইটে পোস্ট করে, বিজেপির বিরুদ্ধে আরও একবার সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্ত্রী ও শিশুপুত্র সহ পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিক কাজের সূত্রে দিল্লিতে গিয়েছিল। সেখানে তার স্ত্রী এবং শিশুপুত্রকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই নির্যাতনের ভিডিও রবিবার নিজের সোস্যাল সাইটে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। যে ভিডিওতে ওই শিশুপুত্রের শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন দেখানো হয়েছে। ভিডিওটিতে ওই ব্যক্তিকে বলতেও শোনা গেছে, “দেখো আমার ছেলেকে মেরে কী করেছে। পুলিশ মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে।” এমনকী তার স্ত্রীও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি মালদার চাঁচলের বাসিন্দা। (যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি প্যারালাল নিউজ)। এই ভিডিও শেয়ার করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রীতিমত তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও একবার বিজেপির বিরুদ্ধে ভাষা সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়ে তৃণমূল নেত্রী লেখেন, “ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস। দেখুন, কীভাবে মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের শিশু ও মা-কে দিল্লি পুলিশ মেরেছে! বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিজেপির ভাষা সন্ত্রাসে একটি শিশুও ছাড় পাচ্ছে না! দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এরা?” গত কয়েকদিন আগে ভিন রাজ্যে অত্যাচারিত বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা এবং সোস্যাল মিডিয়া—এই জোড়া ফলায় এই ইস্যুতে বিজেপিকে বারবার নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন রাজনীতির পরিসরে এক ইঞ্চি জায়গাও তিনি ছাড়তে রাজি নন। আর তাই বাঙালি সেন্টিমেন্টকে ভোটের ময়দানে কাজে লাগাতে আগামীকাল, অর্থাৎ সোমবার বোলপুর যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানে দুপুর ২টোয় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পা-মেলাবেন তিনি। পাশাপাশি ওই দিন প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে বাংলা এবং বাঙালিকে হাতিয়ার করে যে আগামী কয়েক মাসে আরও সরগরম হবে বঙ্গ রাজনীতি, তা বলাই যায়।
নিজেকে কি ‘শান্তির দূত’ ভাবতে শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

সারা বিশ্বে যেখানেই সংঘর্ষ বাঁধছে, সেখানেই মাথা গলিয়ে দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছড়িয়ে দিচ্ছেন শান্তির বার্তা। প্রাচীন কালে রাজাদের মধ্যে যুদ্ধের পর যেমন শান্তির বার্তা হিসাবে সাদা পায়রা ওড়ানো হত, অনেকটা যেন সেরকমই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যেখানে যুদ্ধ বেঁধেছে, সেখানেই শান্তির দূত হিসাবে সংঘর্ষ বিরতির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর কথা অমান্য করলে বাজিণ্য বন্ধের সেই মোক্ষম দাওয়াই শোনানো হয়েছে। এর আগে ‘অপারেশন সিঁদুরে’ ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির সময়ই তিনি একাধিকবার দাবি করেছিলেন যে, তাঁর মধ্যস্থতাতেই নাকি থেমেছিল দুই দেশের যুদ্ধ। যদিও ভারতের তরফ থেকে সেই দাবি খারিজ করে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তৃতীয় কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপে নয়, বরং ১০ মে পাকিস্তানে ভারত চূড়ান্ত আঘাত হানার পর ডিজিএমও পর্যায়ে লড়াই থামানোর আর্জি জানিয়েছিল পাকিস্তান। সে কারণেই ভারত যুদ্ধ বিরতিতে গেছে। আমেরিকার দাবি ছিল, ট্রাম্প নাকি বাণিজ্যকে হাতিয়ার করে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত থামিয়েছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভারতের সঙ্গে সেই বাণিজ্য চুক্তি এখনও করে উঠতে পারেনি আমেরিকা। সে কথাও সে সময় স্পষ্ট করে জানিয়েছিল ভারত। এর আগে ইরান ও ইজরালের মধ্যে সংঘর্ষেও জড়িয়েছিল আমেরিকা। ইরানে বোমা ফেলে সংঘর্ষ বিরতির কৃতিত্ব নিজেই নিয়েছিল ট্রাম্প। এবার থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়াকে লড়াই থামাতে বললেন ট্রাম্প। এক্ষেত্রেও তাঁর দাওয়াই সেই একই, যুদ্ধ না থামালে বাণিজ্য করবেন না তিনি। পাশাপাশি এই আবহে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের ফোন করে বলেছেন, সংঘাত না থামালে তিনি কোনও দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য করবেন না। তবে কি পাকিস্তান যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তি নোবেল দেওয়ার দাবি তুলেছিল তা অমূলক নয়। তবে কী ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও চাইছেন শান্তি নোবেল পেতে? কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধ থামা তো দূরের কথা, দু দেশের মধ্যে পারস্পরিক উত্তাপ আরও বেড়েছে বলেই খবর। কম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের ‘তা কোয়াই’ মন্দিরের কাছে থাই বাহিনীর উপর গুলি চালিয়েছে। পাল্টা প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে থাইল্যান্ডও। তবে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি নোবেল এ যাত্রায় ফস্কে গেল? উঠছে প্রশ্ন।
‘স্বাস্থ্য সাথী’র পরিসংখ্যান তুলে ধরে, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা তৃণমূলের

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য সাথী’। এই প্রকল্পের ধাঁচেই ২০১৮ সালে সারা দেশে ঘটা করেই ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাধারণ নাগরিকদের কাছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পান গ্রাহক। এ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৪১ কোটি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এই সুবিধা পেতে রয়েছে নানা কঠোর বিধিনিষেধও, যার ফলে অনেক সাধারণ মানুষ এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাইরে রয়েছে। এবার মুখ থুবড়ে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ১.২১ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া বাকি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই টাকা পাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্পের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে তারা। ফলে প্রতি বছর ব্যাপকভাবে কমছে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে নথিভুক্ত হাসপাতালের সংখ্যা। যার জেরে সাধারণ মানুষও বঞ্চিত হচ্ছে এই পরিষেবা থেকে। এই সমস্যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের গা-ছাড়া মানসিকতাকেই দায়ী করে ডাক্তারদের সংগঠন আইএমএ(IMA) জানাচ্ছে, “মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসার খরচ পাওয়া যাচ্ছে। বাকি টাকা পেতে মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার পরও টাকা পায়নি হাসপাতালগুলি। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি এই প্রকল্প থেকে।” আইএমএ সূত্রে দাবি, এমনিতেই সাধারণ চিকিৎসা খরচের তুলনায় অনেক কম টাকায় এই প্রকল্পে পরিষেবা দিতে হয় হাসপাতালগুলোকে, তারপরও যদি সেই টাকা পেতে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় সেক্ষেত্রে এই পরিষেবা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে অসুবিধার। আইএমএ-র এই রিপোর্ট সামনে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। সোস্যাল সাইটে ‘স্বাস্থ্য সাথী’র পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রকে নিশানা করেছে তারা। এতদিন রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, রাজ্য সরকার ইচ্ছে করেই ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো একটি জনমুখী প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গে চালু করতে দিচ্ছে না। তারই পাল্টা জবাবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘স্বাস্থ্য সাথী’র পরিসংখ্যান তুলে দাবি করা হয়েছে, “বাংলা ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো সীমিত সুবিধার প্রকল্পে আগ্রহী হবে কেন, যেখানে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিলেই সফলভাবে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ চালাচ্ছে। ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পে ২.৪৫ কোটি পরিবারের ৮.৫১ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পান। ৮৫ লক্ষের বেশি উপভোক্তা ১১,০৯৮.৪৬ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চিকিৎসা পেয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় ৬,০০০ রোগী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।”