ভাইরাল ভিডিও নিয়ে এবার পুলিশের দারস্থ দিলীপ ঘোষ

সম্প্রতি একটি আপত্তিকর গোপন মুহূর্তের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। গতকাল থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ভিডিও। আর সেই ভিডিও ঘিরেই আবারও শিরোনামে উঠে এসেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম। গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে তাঁর দলবদলের জল্পনা নিয়ে নানা মহলে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ সব জল্পনায় জল ঢেলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বিজেপির এই দাপুটে নেতা। বরং ২১শে জুলাই খড়্গপুরের সভা থেকে কারও নাম না করেই দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন, একসময় বিজেপিতে একঘরে হয়ে যাওয়া দিলীপ ঘোষ। এবার তাঁর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল। (যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি প্যারালাল নিউজ)। সেই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে এবার পুলিশের দারস্থ হলেন তিনি। নিয়ে এবার লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানালেন তিনি। তাঁর সুস্পষ্ট অভিযোগ, এভাবে সম্মানহানি করে কেউ বা কারা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করার চেষ্টা করছে। তাঁর মতে এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। এর পিছনে কারা রয়েছে, পুলিশকে তা তদন্ত করে দেখার আর্জি জানান দিলীপ ঘোষ। সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগে দিলীপ লিখেছেন, “তাঁর সম্মানহানি করতে এবং রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করতে সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।” যদিও চিঠিতে কারও নাম নেননি দিলীপ, বরং পুলিশকেই তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বলেছেন। ক্রাইম ব্রাঞ্চের জয়েন্ট কমিশনারকে চিঠি দিয়ে তিনি তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কমিশনের

গত ২১ জুলাই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। যদিও তাঁর এই আকস্মিক পদত্যাগের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। তবে ধনখড় ইস্তফা দেওয়ার পরের দিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদ শূন্য থাকার কথা জানানোয় নির্বাচন পক্রিয়া নিয়ে তৎপর হয় কমিশন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৮ অনুসারে, উপরাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করতে হয়, আর তা সম্পন্ন করার দায়িত্ব যেহেতু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। তাই সেই মতো তারা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। আইন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পর রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংয়ের সম্মতিতে রিটার্নিং অফিসার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল পিসি মোদীকে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করল কমিশন। রাজ্যসভার অন্য দু’জন সচিবকে অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসাবে পর্যায়ক্রমে একবার লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল পালন করেন এবং পরেরবার রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল। ২০২২ সালের নির্বাচনে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল যেহেতু এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাই এবার রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেলের উপর সেই দায়িত্ব পড়েছে। এমনকী নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরির কাজও নাকি শুরু করে দিয়েছে কমিশন। লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের নিয়ে তৈরি হবে এই তালিকা। যদিও কমিশন এখনও পর্যন্ত নির্বাচনের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। তবে তা শীঘ্রই করা হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি জারির ৩০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা। কারণ ২০২২ সালে বিজ্ঞপ্তি জারির ৩২ দিন পর নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। যতদিন না নির্বাচন পক্রিয়া শেষ হচ্ছে ততদিন রাজ্যসভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাবেন ডেপুটি চেয়ারম্যান। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাধারণত লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরাই ভোট দেন। সেক্ষেত্রে লোকসভার ৫৪৩টি আসন এবং রাজ্যসভার ২৪৫টি আসনের সাংসদরা এই নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে তার মধ্যে লোকসভার ১টি আসন এবং রাজ্যসভার ৫টি আসন সাংসদ শূন্য থাকায় মোট ৭৮২ জন সাংসদ ভোট দেবেন। সেক্ষেত্রে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ৩৯২টি ভোট। আপাতত যত শীঘ্র সম্ভব নির্বাচন পক্রিয়া শেষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ কমিশনের কাছে।
অপরাজিতা বিল ফেরত পাঠানোয় কেন্দ্রকে বিঁধলেন কুণাল ঘোষ

গত বছর অগস্ট মাসে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ করিয়েছিল। আরজি করের ঘটনায় প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার যে কড়া অবস্থান নিচ্ছে, তা বোঝাতে বিধানসভায় পাশ করা হয় ‘অপরাজিতা’ বিল। এমনকী এই বিলে ছিল মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশও। গত বছর বিধানসভায় ওই বিল পাশ হওয়ার পর তা পাঠানো হয় রাজভবনে। তারপর সেটি ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই বিল আবার ফিরে এল রাজ্য সরকারের কাছে। ‘অপরাজিতা’ বিল ফেরত পাঠালেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজভবনের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই বিল অত্যন্ত কঠোর এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই বিল সংবিধানের নির্দিষ্ট কিছু বিধির পরিপন্থী। এমনকী শীর্ষ আদালতের রায়েরও পরিপন্থী বলে কেন্দ্রের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। অন্যসব বিলে রাজ্যপাল নিজেই সাধারণত সই করেন, কিন্তু এটি স্পর্শকাতর বিষয় সংক্রান্ত হওয়ায় তা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হল বিল। ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩ এর ৬৪ নম্বর ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছরের পরিবর্তে যাবজ্জীবন (আজীবনের জন্য) বা মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে অপরাজিতা বিলে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সংশোধনীকে অতিরিক্ত কঠোর ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। বিলটিতে ৬৫ নম্বর ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১৬ বছরের নীচে ও ১২ বছরের নীচে ধর্ষণের শাস্তির মধ্যে যে পার্থক্য ছিল, তা মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে। বিলের ৬৬ নম্বর ধারায় ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডকে বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পর্যবেক্ষণ, এতে বিচার ব্যবস্থার বিবেচনার স্বাধীনতা লঙ্ঘণ হবে। আর সেই কারণেই রাজভবন অপরাজিতা বিল রাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে বলে রাজভবন সূত্রের খবর। অন্যদিকে ‘অপরাজিতা’ বিল ফেরত পাঠানোয় কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে আবারও নিশানা করলেন রাজ্যের শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “এতে আবারও প্রমাণ হয়ে গেল যে এই বিজেপি নারী নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিতে প্রস্তুত নয়। কারণ এদেরই সাংসদরা শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত, তাঁদের পাশে নিয়ে বসে থাকে। এদের রাজ্যগুলিতেই পরপর ধর্ষণ-খুনের মতো ঘটনা ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের স্বার্থে, মা-বোনেদের স্বার্থে ভারতের মধ্যে নজিরবিহীন যে বিল পাশ করিয়েছিলেন, তাতে অনুমোদন না দেওয়ায় বিজেপির দ্বিচারিতার মুখোশ খুলে গেল।” সব মিলিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোরের ফলে এই বিলের ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল তা বলা যায়।