নকশাল আন্দোলনের অন্যতম নেতা আজিজুল হক প্রয়াত

প্রয়াত ছিলেন বর্ষীয়ান নকশাল নেতা আজিজুল হক। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রবীণ নকশাল নেতা। রাজনীতির পাশাপাশি লেখক হিসেবেও নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছিলেন৷ জেলে বসেই লিখেছিলেন তাঁর জনপ্রিয় বই ‘কারাগারের ১৮ বছর’। জেলে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনাকেই লিপিবদ্ধ করেছিলেন আজিজুল হক— যা রীতিমত দাগ কেটেছিল পাঠকের মনে। জানা গিয়েছিল, কয়েকদিন আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে গিয়েছিল প্রবীণ এই নেতার। তারপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন ভর্তি থাকার পর ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎই শনিবার দুপুরের পর থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি ৷ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাতে তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনেও। শেষমেশ সোমবার দুপুরে প্রয়াত হন এই প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ৷ নকশাল বাড়ি আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ আজিজুলের জন্ম উলুবেরিয়ার রণমহল গ্রামের জমিদার পরিবারে। খুব কম বয়সে দাদার সঙ্গে কলকাতায় পড়তে আসেন। সেই সূত্রে সিপিআই নেতা নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরিচয়৷ পরে তাঁর হাত ধরেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর ৷ পরে হাওড়ার কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন৷ ফলে বাবা সৈয়দ কাশেমেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি ৷ এরপর কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের সময় সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি ঝুঁকে পড়েন আজিজুল। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার জেলে যান৷ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সুন্দরবন যান সংগঠনের কাজে। চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর সিপিআই(এম-এল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি। জীবনে অসংখ্যবার জেলেই কাটিয়েছেন এই প্রবীণ নকশাল নেতা। সত্তরের নকশাল আন্দোলনের পর ১৯৮২ সালে বামফ্রন্টের শাসনকালেও গ্রেফতার হন তিনি। প্রায় সাত বছর জেলে ছিলেন। তাঁর মুক্তির দাবিতে সেসময় হয়েছিলেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ। ১৯৮৯ সালে জেলমুক্তির পর আর সেভাবে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না আজিজুল হক। তবে যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকেনি। এমনকি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময়ও তিনি প্রকাশ্যেই বামফ্রন্টের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ‘প্রবীণ রাজনীতিক আজিজুল হকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। আজিজুল হক একজন লড়াকু, সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনও মাথা নত করেননি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহযোগীদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।’ কমরেড আজিজুল হকের মৃত্যুতে যে একটা যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল, তা দ্ব্যর্থহীন ভাবেই বলা সম্ভব।
“এবারের খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে,”—দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দলনেত্রীর

রাজনীতিতে তিনি যে অলরাউন্ডার, ২১শের সভা থেকে বুঝিয়ে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমত ক্যাপ্টেনের মতো ২৬-এর ক্রিজে চতুর্থ বারের জন্য বাংলা দখলের ‘রান’ বেঁধে দিলেন দলীয় কর্মীদের। এদিন মমতা বলেন, “এবারে খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে। একেবারে ছক্কা মারতে হবে।” একুশে জুলাই আসলে একটা আবেগ। তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা ইভেন্ট, শহীদ স্মরণ। তাই সকাল থেকেই সরগরম গোটা চত্বর। ‘দিদি’ তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা শুনতে রাত থেকে একটু একটু করে সভামঞ্চে ভিড় করতে শুরু করেছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ছাব্বিশের সুর কী হবে? ভোটের আগে বিজেপি সহ বিরোধীদের ক্লিন বোল্ড করতে ক্যাপ্টেন কী ভোকাল টনিক দেন, তা শুনতে ধর্মতলায় লাখো মানুষের ভিড়।তবে সেই চেনা রণংদেহী মেজাজে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লড়াইয়ের মঞ্চে তিনি যে সামনে থেকে টিম সামলাবেন, তা বুঝিয়ে দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, শহীদদের রক্তে তর্পণ করে বলছি, যতদিন দিল্লি থেকে উৎখাত না করতে পারি, ততদিন শান্ত হব না। আমি একাই ১o জনের সঙ্গে লড়ে নেব।” আসলে বাঙালি অস্মিতা, এনআরসি, ভোটার তালিকা সংশোধন, বাংলার বঞ্চনা সহ একাধিক হাতিয়ার যে তার হাতে। ২৬শে আরও বেশি আসন যে দরকার তাও নির্দিষ্ট করে দেন। এদিন সভামঞ্চে পহেলগাও হামলায় শহীদ ঝন্টু আলী শেখ এবং বিতান অধিকারীর পরিবারকে মঞ্চে তুলে তাদের হাতে ২ লক্ষ টাকা তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা গেল না কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় চলছেন।” ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে, অথচ ২০২৬-এ বিধানসভাকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আচমকাই জয় শ্রী রামের বদলে জয় মা দুর্গা, জয় মা কালীর নাম বারেবারে বলেন, যা নিয়েও একুশের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “টেলি প্রম্পটারে দুলাইন বাংলা লিখে এনে বলে দিলেই বাঙালি হওয়া যায় না। ওদের না আছে জ্ঞান, না আছে কিছু।” পাশাপাশি কেন্দ্রের মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “সর্বনাশা আইন বাতিল না করলে, বাংলায় হাত দিলে কমিশন ঘেরাও করব আমরা। কিছুতেই বাংলা ও বাঙালির উপর অত্যাচার মানব না।” এরপরই মমতার হুঁশিয়ারি, “বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার হলে ছেড়ে দেব না। আমাদের আটকে রাখা যায় না, রোখা যায় না।” ইতিমধ্যে অসমের ফরেন ট্রাইবুনালে বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে মমতার খোঁচা, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী আপনি অসমটাই সামলাতে পারছেন না, আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। সুস্মিতা দেবকে বলব দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দরকার হলে আমরা সবাই যাব। দেখব কতজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখেন।” এদিন সিপিএমকেও মমতার তোপ, “মনে নেই হাজরা মোড়ে সেদিন আমায় মারতে মারতে প্রায় মেরেই ফেলেছিলেন, মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র এক্সারসাইজ করি বলে আর হাঁটি বলে এখনও চলছি, লড়াই করে যাচ্ছি।”
এবার চোখ দিয়ে জল নয়, আগুন বেরোবে : মমতা

না এবার বৃষ্টিহীন ২১। ধর্মতলার শহীদ দিবস বৃষ্টিহীন! না এমন ছবি খুব একটা চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ে না। তবে এবার ব্যতিক্রমী ২১ দেখল গোটা বাংলা। মঞ্চের সামনে ছাতা মাথায় সারি সারি মানুষের ভিড়। প্রতি বছর একুশের এটাই পরিচিত ছবি। তবে এবার? না। বৃষ্টি হল না একফোঁটাও। এই দিনে আকাশ জুড়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি, তৃণমূল নেত্রীর কাছে যা ‘গুড লাক সাইন’। তবে এই ২১শে সেই পরিচিত বৃষ্টি না হওয়ার কারণ অবশ্য ব্যাখ্যা করলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, “এবার কেন বৃষ্টি হয়নি বলুন তো? এবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে। চোখ দিয়ে জল নয়, এবার আগুন বেরোবে।” লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন। আগামী বছরেই ফের ভোটাভুটি। একুশের মঞ্চ থেকে যেন ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “এবার খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে। একেবারে ছক্কা মারতে হবে।” সেকথা মেনে ভোট প্রস্তুতি যে সোমবার থেকেই শুরু করে দিতে বললেন তৃণমূল নেত্রী।
একুশের মঞ্চে বাঙালি অস্মিতায় শান মমতার

তবে কি বাংলা ভাষা বাঁচাতে নতুন করে ভাষা আন্দোলন? ২১শের মঞ্চ থেকে সেই ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার বাইরে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলায় কথা বললেই জুটছে ‘বাংলাদেশি’ তকমা। বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে এবার নতুন করে ঠিক সেই আন্দোলনেরই ডাক দিলেন বাংলার মু্খ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষার উপর চলছে বিশাল সন্ত্রাস। কে কোন ভাষায় কথা বলবে, কে কী খাবে, তা নিয়েও বলে দেবে ওরা! জেনে রাখবেন, এখানে সবার অধিকার রক্ষিত হবে।” প্রয়োজনে নতুন করে ভাষা আন্দোলনের কথাও বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুধু বলেই ক্ষান্ত হলেন না। নিজের ভাষা রক্ষায় মঞ্চ থেকেই দলের জনপ্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট কর্মসূচিও বেঁধে দিলেন। সব ভাষার মানুষকে নিয়ে শনি-রবিবার মিছিল-মিটিংয়ের কথা বললেন তিনি। মমতার কথায়, ”দলের সাংসদদের বলব, সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা-শহিদ উদ্যানে ধরনায় বসুন।” ভাষা যখন রাজনীতির অঙ্গ, সেখানে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি পিছু হটতে নারাজ রাজনীতিতে পোড় খাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেকথা তিনি সোচ্চারেই উচ্চারণ করলেন। বললেন, ”একদম ছেড়ে দেবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের রাজ্যে সকলে নিজের নিজের ভাষায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আমরা সব ভাষাকে সমানভাবে সম্মান করি।” কিন্তু বাংলা ভাষা আর বাঙালির সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন তিনি।
“২৬শে ওদের দিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলাব”—২১শের মঞ্চ থেকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

এবার বিজেপিকে দিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শহীদ দিবসের মঞ্চে এসে প্রথমে ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাইয়ের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড।’ শহীদদের নামের তালিকায় মাল্যদানের পর রীতিমতো হাঁটু মুড়ে প্রণাম জানান অভিষেক। এদিন শুরু থেকেই বিজেপিকে নিয়ে ‘অ্যাটাকিং মুডে’ ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে সরাসরি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, “আগে জয় শ্রী রাম বলত। ঠেলায় পড়ে এখন রাম ছেড়ে জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা বলছে। ২৬-এর পর ওদের দিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলিয়ে ছাড়ব।” উল্লেখ্য, সম্প্রতি দুর্গাপুরে জনসভা থেকে ‘জয় শ্রীরাম’-এর বদলে একাধিকবার ‘জয় মা দুর্গা- জয় মা কালী’ বলতে শোনা গিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে। এদিন নাম না করে এভাবেই প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করলেন অভিষেক। বাম-কংগ্রেস নয়, নিজের বক্তব্যর প্রথম থেকে শেষ এদিন বিজেপিকে আক্রমণ শানান ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। একুশের জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই কার্যত ছাব্বিশের সুর বেঁধে দিলেন অভিষেক। বুঝিয়ে দিলেন বাম-কংগ্রেস নয়, এই রাজ্যে যে বিজেপি তৃণমূলের এক ও একমাত্র শত্রু। আর তাই এদিনের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে গণতান্ত্রিকভাবে ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ পাঠানোর ডাক দিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষকে এরা ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চায়। বিজেপিকে প্রথম থেকেই আমরা বাংলাবিরোধী বলেছি। আজ থেকে ১৬-১৭ মাস আগে আমরা ব্রিগেডে সমাবেশ করেছিলাম। তাতে স্লোগান ছিল, ‘জনতার গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।’ সেই দিন আমরা যে ডাক দিয়েছিলাম, সেটা শুধু স্লোগান না। ওটা বিজেপির চরিত্র উন্মোচন। শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়। বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে তাচ্ছিল্য করে, ময়দানে জিততে না পেরে নির্লজ্জের মতো গরিব মানুষকে মারার পরিকল্পনা করে। টাকা আটকে রাখে। ওদের একটাই পরিচয়, বাংলাবিরোধী।” ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে গুলোতে বাঙালিদের নির্যাতনের অভিযোগ আসছে জানিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে তৃণমূল নেত্রীকে। এদিনের একুশের সভা থেকেও তা নিয়ে আওয়াজ তুললেন অভিষেক। ভিন রাজ্যে বাংলা বললে হেনস্তা নিয়ে সরব হলেন তিনি। বললেন, “বাংলায় কথা বললে অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বাংলাদেশি। ১৫ দিন হয়ে গেল কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রের সরকার? গর্ব করে বাংলায় কথা বলব। লোকসভায় আমরা এই সেশনে দরকারে বাংলায় কথা বলব। আগে ১০বার বলতাম, এবার ৫০০ বার বলব। তোমাদের কথায় বাংলা উঠবে বসবে?” তাঁর কথায়, বিজেপি বাংলায় মাটি শক্ত করতে পারেনি বলেই এখানকার বাসিন্দাদের উপর হেনস্তার ছক। তিনি বলেন, “বাংলায় ভোটে জিততে না পেরে এই ধরনের চক্রান্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে, ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে, এজেন্সিকে কাজে লাগিয়েও বাংলায় জিততে পারেনি বিজেপি। তাই এগুলো করছে।” এরপরই ২৬ সালে বাংলা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন,”আমি ভবিষ্যতবাণী করি না। কিন্তু করলে ভেবেচিন্তে বলি। যে কটা আবর্জনা রয়েছে তাদের ঝেঁটিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলতে হবে। আমি ২১শে খেলা হবে বলেছিলাম, এবার পদ্মফুল উপড়ে ফেলার ডাক দিলাম।” এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, “একদিকে ইডি লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’ চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বললেন, “মেরুদণ্ড বিক্রি করব না।”
জেলার দুই থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার ৮ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী

ফের সীমান্তে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। ৮ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সহ গ্রেপ্তার দুই ভারতীয় দালাল। মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানা এলাকায় জামিরুল শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। ধৃতরা সাকিরুল ইসলাম, মোঃ সিরাজুল, মোঃ শামসুল শাকিল শেখ ও সঞ্জিত কর্মকার। সকলেই বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। ঘটনায় আশ্রয়দাতা জামিরুল শেখ ও তোফাজ্জল শেখকে গ্রেফতার করে লালগোলা থানার পুলিশ। অন্যদিকে রানীনগর থানার পুলিশ আজ ডিগ্রি এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে তিনজন বাংলাদেশীকে ও একজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের নাম তারিকুল ইসলাম, আব্দুল রহমান ও মোহাম্মদ সাহেব আলী। সকলেই বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের সহযোগিতা করার অভিযোগে সাদ্দাম হোসেন রাণীনগর থানা এলাকার বাসিন্দা তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিদেশি আইনে মামলা রুজু করে আদালতে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে তোলা হবে। এর সঙ্গে কে বা কারা আরো জড়িত রয়েছে তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এদের কী উদ্দেশ্য ছিল সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বঙ্গ বিজেপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা : ফিরহাদ

একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন ফিরহাদ হাকিম। সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতা কার্যত জন-অরণ্যে পরিণত হয়েছে। ধর্মতলার রাস্তা একপ্রকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দখলে। আর এই ভরা সভা থেকেই গেরুয়া শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন,”বাংলায় বেশি লাফালাফি করছে বিজেপি। মনে রাখবেন বঙ্গ বিজেপি আসলে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।” এখানেই শেষ নয়, বিজেপির কারণে গোটা রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মত ফিরহাদের, তিনি বলেন, “রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে বিজেপি। গোটা দেশে বাঙালিদের নির্যাতন করা হচ্ছে বিজেপির কারণে। বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে অত্যাচার করা হচ্ছে।” এদিন তার ভাষণে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন,”আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে লড়াই করেছি। সেসব যেন না ভুলে যাই।” এদিন বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ফিরহাদ বলেন, “আমরা সিপিআইএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। মনে রাখতে হবে আজ শহীদদের রক্তেই বাংলা সিপিআইএম মুক্ত।”
তৃণমূলের সভাকে ডিস্টার্ব করতে শুভেন্দুর উত্তরকন্যার ডাক : শতাব্দী রায়

তৃণমূলের শহীদ দিবসকে ডিস্টার্ব করতে শুভেন্দুর পাল্টা সভা বলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে তীব্র কটাক্ষ করলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তৃণমূলের শহীদ দিবসের দিন উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপির যুব মোর্চা। যে সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যা নিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। তবে তৃণমূলের শহীদ দিবসের দিনই শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা এই উত্তরকন্যা অভিযানকে তীব্র আক্রমণ করলেন বোলপুরের সাংসদ শতাব্দী রায়। সোমবার ধর্মতলায় শহীদ মঞ্চে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে বোলপুরের সাংসদ বলেন, “একুশে জুলাই বহু বছর ধরে হয়ে আসছে, এটা একটা আবেগ। উনি নিজে যখন তৃণমূলে ছিলেন তখন নিজে এই সভায় বক্তব্য রেখেছেন। তাই আজ হঠাৎ করে দল-বদলে একই দিনে উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়ে কার্যত একুশে জুলাই-এর কর্মসূচিকে ডিস্টার্ব করতে চাইছেন শুভেন্দু অধিকারী।” পাশাপাশি এদিন তিনি আরও বলেন, “এভাবে কোনও কিছুর পাল্টা ডাক দিয়ে সফলতা আসে না, মানুষ সব দেখছে সব বুঝছে। এটা ওনার মনে রাখা উচিত পালটা ডাক দিয়ে আসলে উনি তৃণমূলের আবেগকেই আঘাত করলেন।”
দিল্লির চোখও মমতার সভায়

২১-এর মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী ঠিক কী বার্তা দেন? তা নিয়ে আগ্রহ দিল্লির অন্দরেও। এমনকী জাতীয় রাজনীতিতেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আজকের এই সভা। এককথায় বিজেপি-বাম-কংগ্রেস-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলই তাকিয়ে রয়েছেন আজ একুশের দিকে। হাতে আর মাত্র কয়েকমাস। সব ঠিক থাকলে ২০২৬-এর মে-জুন মাস নাগাদ রাজ্যে নির্বাচন। অর্থাৎ আগামী বছর বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ২১শে জুলাই। আর তাই এবারের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নিতে পারে তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দেও। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের একটা প্রাথমিক রূপরেখা ধর্মতলার মঞ্চ থেকেই তৃণমূল নেত্রী ঠিক করে দেবেন। ইতিমধ্যেই নিজেদের ‘আঞ্চলিক’ তকমা থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় সর্বভারতীয় দলের মর্যাদা পেতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল। মেঘালয়ে কংগ্রেস ভেঙে মুকুল সাংমার হাত ধরে কিছুটা মুখ রক্ষা হলেও, ত্রিপুরা, অসম, কেরল, গোয়াতে রীতিমত হতাশাজনক ফলাফল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দলের। তাই আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে তৃণমূলের ভূমিকা কী হতে চলেছে, সেই প্রশ্নের উত্তরও আজই মিলবে বলেই মনে করছে শাসক-বিরোধী দুই রাজনৈতিক শিবির। তবে প্রতি বছরের মতো এই মঞ্চ থেকে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জায়গাও যে তৃণমূল নেত্রী ছাড়বেন না, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিজেপি শিবির। তাই বিধানসভার আগে আগে মমতার আক্রমণ ঠিক কীভাবে সামলাবে? তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরও। বিজেপির সোশাল মিডিয়া সেল ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তৎপর। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের ক্লিপিংস কেটে নিয়ে পালটা অভিযোগ, তীব্র আক্রমণ করার নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্যস্তরের তো বটেই, অনেক জাতীয় স্তরের নেতাদেরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে বলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব । তবে শুধু বিজেপি নয়, অন্যদিকে, জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, বলা ভালো ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের উপস্থিতি কতটা সক্রিয় থাকবে, সেই উত্তরও মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ থেকে স্পষ্ট হবে বলেই মনে করছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে মমতার ভাষণের সমালোচনা করা হলেও জাতীয় স্তরের নেতারা তা থেকে বিরত থাকবেন বলেই সূত্রের খবর। সদ্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরে সংসদে কংগ্রস ও তৃণমূলের মধ্যে সমন্বয় থাকবে বলেই তাঁরা আশা করছেন। যা বিজেপিকে কোণঠাসা করার জন্য প্রয়োজনীয় বলেই মত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের।
২১শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সভা, ভিড় এড়াতে কোন রাস্তায় যাবেন

আজ ২১শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ সমাবেশ। ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের এই মেগা ইভেন্ট ঘিরে যে কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক জমায়েত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। যদিও এই সমাবেশ ঘিরে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের এই ভিড়ে নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কলকাতা পুলিশের কাছে। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকেও যা ব্যবস্থা নেওয়ার ইতিপূর্বেই তা নেওয়া। জারি হয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ। কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার নেতৃত্বে সকাল থেকেই সক্রিয় পুলিশ। অন্যদিকে আজকে সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে পারে সাধারণ মানুষ। অফিসযাত্রী থেকে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা তাই স্বাভাবিক ভাবেই ধন্দে আছেন কোথায় জ্যামের কবলে পড়তে হয় এটা ভেবে। যদিও এই হেভিওয়েট সভা ঘিরে বিপুল মানুষের সমাবেশে ভিড় এড়ানোটা সত্যি চাপের। তবু জেনে নেওয়া ভালো কোন কোন রাস্তায় আজ ভুলে পা দেবেন না। আজ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট সাতটি বড় মিছিল রওনা দেবে ধর্মতলার উদ্দেশে। শ্যামবাজার মোড়, হাজরা পার্ক, হেদুয়া পার্ক, পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট, হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন থেকে একে একে শুরু হবে মিছিল। শ্যামবাজার মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল এগোবে বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, এনসি স্ট্রিট, জিসি অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবে। হাজরা পার্কের মিছিল যাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, এক্সাইড মোড়, জেএন রোড ধরে ধর্মতলায়। অন্যদিকে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে মিছিল এগোবে পার্ক স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, এজেসি বোস রোড, মৌলালি মোড়, এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে সভাস্থলের দিকে। এই রাস্তাগুলি ছাড়া শহরের বাকি রাস্তায় তেমন যানজটের আশঙ্কা নেই। দিনের বেশ কিছুটা সময় ট্রাক ও ভারী যান চলবে না শহরে। ফলে মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছে গেলে, মোটের উপর রাস্তা ফাঁকাই থাকবে।